বাড়াবাড়ি চাপ নয়,সন্তানের পড়াশোনার মনোযোগ বাড়ান কৌশলে!


টাইমস জার্নাল: বেশির ভাগ বাবা মায়ের চিন্তা কি জানেন? সন্তানের ভালো রেজাল্টের নিয়ে। তারা নিজের জীবনের ব্যর্থতার যত বোঝা সব চাপাতে চায় কচি মনের ওপর। ভালো রেজাল্ট চাই, সবার সেরা, এই বিষয়ে অনেক বাবা-মা তাঁর প্রানপ্রিয় কচি সন্তানকে নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। কখন শারীরিক আবার কখন মানসিক ভাবে। যদিও শারীরিক শাস্তি কিংবা মানসিক চাপ দেওয়া কোনো শিশুর জন্যই ভালো নয়।

শিশুর পড়াশোনায় উন্নতি করতে গেলে আপনাকে কিছু কৌশল বের করতে হবে। কৌশল গুলি এমন কিছু কঠিন বা অবাস্তব নয় । কয়েকটি কৌশলের অভিজ্ঞতা বিনিময় করছি। যা পড়লে এবং একটু ভাবলেই আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কি ভাবে শিশুর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

১. সন্তানকে সময় দান:
আপনি কি শিশুকে তার চাহিদা মত যথাযথ সময় দেন ? তার সব কথায় গুরুত্ব দেন ? বেশির ভাগ বাবা মা সন্তানদের সময় ও গুরুত্ব দান বিষয়ে অসচেতন। দেখুন শিশুকে ভালো পড়ুয়া বা ভালো মানুষ হিসেবে গড়তে গেলে প্রথমত তাকে সময় দিন। তাকে কিছু শেখানোর আগে সে কি বলতে চায় তাতে মনযোগ দিন।

২. শিশুকে মর্যাদা দান:
শিশুরা ছোট হলেও তুচ্ছ নয়। প্রত্যেকের একটা ব্যক্তিত্ব আছে। তবে শিশু দের আত্মমর্যাদা বোধ বেশি থাকে। লক্ষ্য রাখতে হবে তাদের যেন মানের হানি না ঘটে । অতিরিক্ত শাসন শিশুর ব্যর্থতার অন্যতম দিক। ‘শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে’- এটি মাথায় রেখে শিশু কে মর্যাদা দিন। মনে রাখবেন স্নেহ সর্বদাই নিম্নগামী। শিশুকে স্নেহ করুন। তবেই সে শ্রদ্ধাশীল হবে।

৩.পরিবার পরিষেবা দান:
শিশুকে কখনও একা রাখবেন না এবং কেবল এক জনকে দিয়েই পড়াবেন না। শিশুর পড়াশোনার সহায়তার জন্য পরিবারের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। যে স্থানগুলি শিশুর চলাফেরা বসবাস বেশি সেই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পড়ার বিষয় টাঙ্গানো, অংকের সূত্র বিভিন্ন চার্ট লাগিয়ে ইত্যাদি দেওয়া যা তাকে পড়াশোনা প্রতি আগ্রহ বাড়াতে পারবে।

৪. ডিজিটাল শিখন:
বর্তমানে টিভি কম্পিউটার মোবাইল ইত্যাদি শুধু বিনোদনের বিষয় নয়। সিডি, চিপস, ড্রাইভ এর সাহায্যে টিভি কম্পিউটারে শিক্ষামূলক ভিডিও এবং ইউটিউবে রয়েছে অসংখ্য শিক্ষামূলক ভিডিও। বহু মজার উপায়ে কঠিন সব সূত্র শিখতে চাইলে ইউটিউবে অনুসন্ধান করুন এবং আপনার সন্তানকে তা দেখান। হ্যাঁ, তবে সাবধান যে শিশু যেন আপনার বাড়ির স্মার্ট ফোনের নেশায় না জড়িয়ে পড়ে সেদিকে সদা সতর্ক থাকতে হবে।

৫. শিক্ষায় আনন্দ দান:
শিক্ষা কে বিনোদন হিসাবে তুলে ধরুন। আপনার শিশু কোন উপায়ে শিক্ষা গ্রহণে সবচেয়ে আনন্দ পায় তা লক্ষ্য করুন। অনেক শিশুই শিক্ষার পাশাপাশি খেলা, অঙ্কন, গান, নাচ, অঙ্গভঙ্গি, অভিনয়, কিংবা ভিন্ন কোনো উপায়ে খুব ভালো শিখতে পছন্দ করে। তার জন্য সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি কোনটি তা জানুন ও শিক্ষায় কাজে লাগান।

৬. শিক্ষা দানের আগে নিজে শিখুন:
আপনি কিছু জানেন না হয়তো বা অনেক কিছুই জানেন। জানা তথ্য শুধু সন্তানের উপর চাপিয়ে দিলেই হবে না। যা জানেন না তা নিজেও শিখে নিন। আর সন্তানের সঙ্গে নিজে পড়াশোনা করুন। এতে সে দারুণ উৎসাহিত হবে।

৭. উদারতা দান:
কোন একটা নিয়মে বি শিক্ষা দানে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। নতুন নতুন বিষয়ে শিশুকে প্রচেষ্টা করতে শিখান । শুধু পাঠ্যবইতেই শিশুকে সীমাবদ্ধ রাখবেন না। শুধু একটি বই যদি বারবার পড়তে হয় তাহলে তা একঘেয়ে হয়ে যাবে। তার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য জোগাড় করে শেখাতে হবে। আপনার শিশু কোন কোন বিষয় শিখালে তার জ্ঞানের পরিধি ঘটবে তা উপলব্ধি করুন। এ বিষয়ে নিজের জ্ঞান থাকলে তাও তাকে জানান। এভাবে পারস্পরিক তথ্য বিনিময়ে আপনার সন্তান সহজেই শিক্ষালাভ করতে পারবে।

৮. পড়ার খেলার সময় ভাগ করে দিন:
টাইম এন্ড টাইড ওয়েঠ ফর নান।সময়ের গুরুত্ব কি তা শিশুকে উপলব্দি করান। কাজের সাপেক্ষে সময় কে কিভাবে ব্যবহার করবেন তা বোঝানো দরকার। কোনো রুটিন ছাড়া পড়াশোনা করলে তা সঠিকভাবে কাজে নাও লাগতে পারে। আবার শিশুদের সঠিকভাবে রুটিন মেনে চলা কঠিনও হতে পারে। তাই শিশুর জন্য খেলার ও পড়ার সময় ভাগ করে দেওয়া উচিত আপনারই।

৯. স্থান নির্বাচন:
পড়াশোনা জন্য চায় সুস্থ পরিবেশ।
শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন সব বিষয় শিশুর পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তাই পড়ার টেবিলটি এমন স্থানে বসান যেখানে মোবাইল কিংবা টিভির মতো মনোযোগ নষ্ট করার উপাদান নেই।

১০. অবসর দান:
পড়াশোনায় এক ঘেয়ামী দূর করতে শিশুকে মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান। তবে পড়াশোনার জন্য যখন শিশু ব্যস্ত তখন অন্যান্য বিষয়গুলোতে এড়িয়ে চলুন।

১১. পরীক্ষা ভয় দুর করুন:
পরীক্ষা সারাবছর থাকবে না। এ বিষয়টি নিজে মানুন এবং তাকেও জানিয়ে দিন। আর মূল পরীক্ষার আগে সন্তান কে তৈরি করুন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলি বার বার সভ্যাস করান। শিশুর পড়াশোনায় অগ্রগতি লক্ষ্য রাখুন। কোনো সময় কোনো কারণে সে পিছিয়ে গেলে পরবর্তীতে তা পূরণ করা কঠিন হবে। তাই সদা সতর্ক থাকুন।

১২. উৎসাহ ও প্রশংসা:
মানুষ মাত্রই প্রশংসার ভিখারী। শিশুর ভালো কাজে প্রশংসা দান ও ভূল কাজে সংশোধন করুন। উৎসাহ ও প্রশংসা পেলে শিশু পড়ুয়াদের পড়াশোনায় আগ্রহ বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই সর্বদা তাদের উৎসাহ দিতে ভুলবেন না। সামান্য উন্নতিতেই প্রশংসা করুন।

১৩. শিশুর পিঠের ব্যাগের বোঝা কমান:
স্কুলের পথে শিশুদের পিছন থেকে দেখলে মনে হয় আস্ত একটা ব্যাগ হেঁটে চলেছে। এর পরিণতি কিন্তু ভয়ঙ্কর। নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে আপনার সন্তান। পিঠে বিদ্যের বোঝা বইতে বইতে শৈশব উধাও হয়ে যাচ্ছে আপনার কলিজার টুকরোটির।
ওদের খোলা আকাশ চাই, খেলার মাঠ চাই, ফিরে আসুক রঙিন শৈশব। এই প্রজন্মের শিশুরা সবুজ বনে সবুজ দ্বীপের রাজা হয়ে বাঁচুক।

জানে আলম, ফারাক্কা, মুর্শিদাবাদ
(লেখক: নূর জাহানারা স্মৃতি হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক)

0/কমেন্ট করুন