টাইমস স্পোর্টস: কোপা আমেরিকায় মাঠ পরিচালনার মান ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। রেফারির মান ও ভিএআর প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে জোরেশোরে প্রশ্ন উঠেছে
কোপা আমেরিকা শুরুর আগে রিও ডি জেনিরোয় অনুশীলন করেছেন ৫৬ জন রেফারি এবং তাঁদের সহকারী। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতেই চলেছে এ কর্মশালা। কিন্তু কোপা আমেরিকা এত দূর গড়ানোর পর এই রেফারিরাই ভিএআর প্রযুক্তি নিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে। বিবিসির লাতিন আমেরিকান প্রতিবেদক টিম ভিকেরি যেমন টুইটারে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘মেসির লাল কার্ডের মতো নিষ্ঠুরতা ঠিক করতে না পারলে প্রযুক্তির কী দরকার?’বোঝাই যাচ্ছে, ভিএআর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভিকেরি। ফুটবল এ প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলা নতুন কিছু নয়। কিছু না কিছু বিতর্ক উঠছেই। এবার কোপায় যেমন অভিষেকেই রাশি রাশি প্রশ্নের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে এ প্রযুক্তি। ম্যাচ অফিশিয়ালরা তার সবশেষ নজরানা পেশ করেছেন কাল রাতে আর্জেন্টিনা-চিলি তৃতীয় স্থান নির্ধারণী লড়াইয়ে।
চিলির বিপদ সীমার মধ্যে বল দখলের লড়াইয়ে গ্যারি মেডেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। সেটি ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত, খালি চোখে পরিষ্কার বোঝা যায়নি। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় চিলি অধিনায়ক পেছনে ঘুরেই শরীর দিয়ে গুঁতোতে শুরু করেন মেসিকে। হঠাৎ এ আক্রমণের পাল্টা জবাব দেননি মেসি। দুই হাত তুলে চিলি অধিনায়কের প্রতিটি গুঁতোয় পিছিয়েছেন দু-এক পা করে। আর এ নৈরাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটিয়েছেন প্যারাগুয়ের রেফারি মারিও ডিয়াজ দে ভিভার। ছুটে এসে সরাসরি লাল কার্ড দেখান দুজনকেই!
কিন্তু ভিডিও রিপ্লেতে দেখা গেছে, লাল কার্ড পাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করেননি মেসি। এমনকি মেডেলও বড়জোর হলুদ কার্ড পেতে পারতেন। যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে, ভিএআর প্রযুক্তি দিয়ে ম্যাচ অফিশিয়ালরা কি সিদ্ধান্তটির যথার্থতা যাচাই করতে পারতেন না?
সত্যি বলতে, এবার কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রেফারিংয়ের (ভিএআর) মান প্রশ্নবিদ্ধ। সেটি টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই। জাপান-উরুগুয়ে ম্যাচে যেমন ভিএআরের সাহায্য নিয়ে রেফারি বিতর্কিত পেনাল্টি উপহার দিয়েছিলেন উরুগুয়েকে। সে পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতায় ফিরেছিল ‘লা সেলেস্তে’রা। আর ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল ম্যাচে তো ‘কেলেঙ্কারি’ ঘটেছে—আর্জেন্টিনা দলের সমর্থকেরা অন্তত এমনটি ভাবতেই পারেন। একটি নয়, দু-দুটি পেনাল্টি পায়নি আর্জেন্টিনা। ভিডিও রিপ্লেতে দেখা গেছে, দুটি সময়ই পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন রেফারি। আরও অবাক করা ব্যাপার, আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়াড়েরা ভিএআর প্রযুক্তির সাহায্য নিতে চাইলেও মাঠের রেফারি রডি জামব্রানো তা নাকচ করে দেন।
এদিকে বিস্ফোরক এক তথ্য জানিয়েছে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো স্পোর্তে’—সেমির এ ম্যাচটি স্টেডিয়ামে বসে দেখেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ার বোলসোনারো। এ ম্যাচে ভিডিও অপারেটিং রুম (ভিওআর) আর মাঠ অফিশিয়ালদের মধ্যে যোগাযোগে নাকি হস্তক্ষেপ করেছিলেন ব্রাজিল প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তাকর্মীরা। তাঁরা ‘রেডিও সিগন্যাল’ ব্যবহার করায় মাঠ থেকে নাকি ভিএআর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কোপায় যে প্রতিষ্ঠান ভিএআর প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে, তাদের কাছে এ নিয়ে কৈফিয়ত চেয়েছে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)।
কোপায় ভিএআর ও রেফারি নিয়ে বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। ফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হবে পেরু। এ ম্যাচে মাঠের রেফারির দায়িত্ব পালন করবেন চিলির রবার্তো টোবার। দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ‘পোকার ক্লাব’ সংযোগ থাকায় আট মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন টোবার। সে সময় পোকার ক্লাবে তাস খেলায় নির্ধারিত হতো এ সপ্তাহে ম্যাচ পরিচালনা করবেন কে। যিনি হারতেন তাঁকে পাতানো ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হতো। টোবার এ চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন (এএফএ) ফাইনালে টোবারের মাঠ পরিচালনা করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
মেসি তো সোজাসাপ্টাই বলেছেন, কোপার শিরোপা ব্রাজিলের হাতে তুলে দেওয়ার আয়োজন করেছে লাতিন আমেরিকান ফুটবল কর্তৃপক্ষ (কনমেবল)। মেসির দাবি কতটুকু সত্য, তা জানার উপায় নেই। তবে এটুকু বলা যায়, কোপায় মাঠের রেফারি ও ভিএআর নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার সুযোগ নেই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন